‘উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে লাভ হয় আমাদের মনোজাগতিক উন্নয়ন’-শিক্ষা উপমন্ত্রী 

প্রকাশঃ অক্টোবর ৩০, ২০২২ সময়ঃ ৮:৫২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫২ অপরাহ্ণ

সুজা তালুকদার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি বলেন, শিক্ষা শুধুমাত্র কোনো সনদ নেওয়ার প্রতিযোগিতা নয়, কর্মজীবনের জন্য একমাত্র উদ্দেশ্যও নয়। আজ রবিবার চট্টগ্রামের নেভি কনভেনশন সেন্টারে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

‘প্রাথমিকভাবে যে-বিষয়টি শিক্ষার মাধ্যমে, বিশেষত, উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে লাভ করি, সেটা হচ্ছে আমাদের মনোজাগতিক উন্নয়ন। এর জন্য দরকার, মনোজাগতিক পরিবর্তন, নৈতিকতার পরিবর্তন ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য আমাদের দীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষে যদি না আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে শিক্ষাটা সত্যিকার অর্থে বৃথা ছিল’-শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তিনি আরো বলেন,‘গ্র্যাজুয়েট যাঁরা আজকের সমাবর্তনে উপস্থিত আছেন, সকলের উদ্দেশ্যে আমাদের নিবেদন হচ্ছে, আমরা দীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষেও সুনির্দিষ্ট পরিবর্তনগুলোকে গ্রহণ করে পুরো জীবনব্যাপী শিখে যাবো। আমাদের বর্তমান শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দর্শন হচ্ছে, লাইফ লং লার্নিং এবং লার্নিং হাউ টু লার্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পেয়েছি বলেই অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় যাঁরা আছেন, তাঁদের কাজের উন্নয়নে, পেশার উন্নয়নে, বৃত্তির উন্নয়নে সার্বিকভাবে অনেককিছু শিখতে হচ্ছে। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ থাকবে যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করার দক্ষতা ও বৃত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নানা ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে, যে কোনো পেশায় আমরা যাই না কেন, যে কোন বৃত্তিতেই যাই না কেন, জীবন ধারণ করা ও কর্ম সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। উচ্চশিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধু-কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে-ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা ইতোমধ্যেই তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে আমরা এই পলিসি বাস্তবায়ন করছি।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী উল্লেখ করেন, উচ্চশিক্ষার জন্য শুধু আউটকাম বেইসড কারিকুলাম নয়, এডুকেশনের ইউনিফর্মেটিও প্রয়োজন। তিনি ভাষাদক্ষতা ও বিভিন্ন ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সেল থাকতে হবে। এটা আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা। জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে মৌলিক বিয়ষগুলোর মান উন্নয়নে যে-রূপরেখা (ডেল্টা রূপরেখা) দিয়েছেন, তা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। গ্র্যাজুয়েটদের এই রূপরেখা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

এই অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ভারতের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সম্মানিত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, ইউজিসির সম্মানিত সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ও প্রফেসর ড. মোঃ আবু তাহের। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী শামীম সুলতানা ও  মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর একেএম তফজল হক।

প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে বলেন, আমরা কি কেবল স্কুল-কলেজেই শিখি? আমাদের শিক্ষা শুরু হয় কি একটা নির্দিষ্ট বয়সে, রাষ্ট্র বা সমাজের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঘরে, নির্দিষ্ট জীবিকার মানুষদের কাছে? সবাই জানি, তা হয় না। আমি ভাষাবিজ্ঞানে সামান্য পড়াশোনা করেছি, আমি জানি যে শিশু যখন তার সাত মাসের শরীরে মায়ের পেটে অবস্থান করছে, সে তখনই মায়ের গলার স্বর অন্যদের গলার স্বর থেকে আলাদা করতে পারছে। সেটা হয়তো তার প্রথম শিক্ষা। জন্মের পর থেকে তার তুমুল শিক্ষা শুরু হয়ে যায়। এক হল সামাজিক শারীরিক শিক্ষা, মাকে সে সকলের থেকে আলাদা করে চেনে, সেই সঙ্গে অন্যেদেরও আলাদা করে।  তার পর আঠারো সপ্তাহ থেকে শুরু হয় তার ভাষা শিক্ষা, সে আর এক কঠিন সাধনা।’

স্বাগত বক্তব্যে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, একটি শিশু জন্মগ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে। তোমরা স্কুলে ও কলেজে ছিলে, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন শেষ করে সমাবর্তনে উপনীত হয়েছো। এই দিনটি শিক্ষার্থীদের জন্য গর্বের দিন, আনন্দের দিন। এই দিন কেউ ভোলে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সম্মানিত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষের বুদ্ধিমত্তা আছে, উদ্ভাবনী ক্ষমতা আছে। মানুষ পরিকল্পনা করতে পারে, চিন্তাকে এগিয়ে নিতে পারে। এ কারণে মানুষ নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে পারে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসির সম্মানিত সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পৃথিবী এখন অদম্য বাংলাদেশের পক্ষে। শিক্ষার্থীদের এটা বুঝতে হবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আউট অব বক্স চিন্তা, নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তিকে ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে গ্রহণ করতে হবে। তবেই উদ্ভাবনী বাংলাদেশ আমরা পাবো। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নকল্পে যে-রূপরেখা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসির সম্মানিত সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, শিক্ষা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। গ্র্যাজুয়েটদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং বড়ো হওয়ার আকাক্সক্ষা রাখতে হবে। দক্ষ জনবল হয়ে উঠতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দক্ষ জনবল খুবই প্রয়োজন।’

সমাবর্তনে ৫৬৯৭ জন গ্র্যাজুয়েট তাঁদের শিক্ষা সমাপনী সনদ গ্রহণ করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করায় সমাবর্তনে তানভীর মাহবুব (ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্স), মো. মহিউদ্দিন ইকবাল (ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), সৈয়দা আফরোজা (ব্যাচেলর অব ল’জ), সোহানা সুলতানা (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), নাবিল সাদ (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), রিদওয়ানুল আহসান নাঈম (মাস্টার্স অব বিজনেস এডিমিনিস্ট্রেশান)-কে চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল, তাহমিনা নাজনীন (ব্যাচেলর অব আর্টস ইন ইংলিশ), ইউসরা আমরিন হুসেইন (ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্স), শাহারিয়া জান্নাত সাফা (্ব্যাচেলর অব ল’জ), অভিজিৎ পাল (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), রাবিয়া জাহান নিশা (মাস্টার্স অব ল’জ), সুজয় বড়ুয়া (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান)-কে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গোল্ড মেডেল এবং তূর্ণা দেব (ব্যাচেলর অব ল’জ), মরিয়ম  বেগম (ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), মোঃ রিদওয়ান সিদ্দিকী ওয়াদুদ (ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), সুলতানা আফরিন (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), জয়া সাহা (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান), মোঃ সাইফুল ইসলাম (মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশান)-কে ভাইস-চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৮ জন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও ১৩ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েটকে প্রদান করা হয় ডিন্স অ্যাওয়ার্ড।
বেলা ৩ টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিবেশনা শুরু হয়। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি সাংস্কৃতিক দল এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G